কয়েকদিন ধরেই সন্তর্পণে এড়িয়ে যাচ্ছিলাম ধর্ষকাম সমাজের নানা বিকৃতি আর বিকারগ্রস্ত উল্লাস। সাহিত্য জগতের নববিস্ময় থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর ছবি নিয়ে মুখোশ পড়া মুক্তমনাদের উচ্ছসিত তামাশা পর্যন্ত – দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে বিরত রেখেছি প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে। কী হবে লিখে?
গত বছর তনু হত্যার পর তাৎক্ষণিক ক্ষোভ থেকে লিখেছিলাম –
“যতই সাত পরত কাপড় জড়িয়ে বাহারী পিনের সমাহারে ঢেকে রাখো চুল-বুক, আজানুলম্বিত কামিজ বা গোড়ালী ঢাকা ভিনদেশী পর্দার (!) পোশাকের বাহারে আড়াল করো নিজেকে – তোমার শরীর সবসময়ই উদোম মেয়ে। তোমার দিকে তাকানো মাত্রই দেখা হয়ে যায় কাপড়ের নীচে চাপা পড়া তোমার একখণ্ড শরীর, একদলা মাংস। পুরুষের কল্পনার লোলুপ জিহ্বা মুহুর্তেই চেটে নেয় তোমায় আষ্টেপৃষ্ঠে। শরীর ঢাকা কি অতই সহজ মেয়ে!!
সদ্য পোয়াতি পুরুষে ভরা শহর, নগর, গ্রাম, পাড়া, মহল্লা, ক্যান্টনমেন্ট, সমাজ – তোমাকে দেখেই তেঁতুলের স্বাদে ভিজে ওঠে গাল। কুকুরেরও ভাদ্র মাস ফুরায় একদিন, ফুরায় না কেবল পুরুষের!!! তোমার জঠরে জন্মে তোমাকেই গ্রাস করার মতলব ভাজে সারাদিন।
ঢেকো না ওভাবে নিজেকে আর, মিছে এই ঢাকাঢাকি-লুকোচুরি খেলা। দিনশেষে সবই আরব্য রজনীর গল্প। দুই টুকরো কাপড় বা সুশোভিত বোরখার নিচে তোমার শরীরই তোমার একমাত্র পরিচয় আজো, তার থেকে তুমি পালাবে কোথায়?”
তো? কী হয়েছে লিখে? কিচ্ছু না।
ক্ষোভ নয় বরং হতাশা চেপে ধরে আমাকে। আমি জানি, আমাদের আশেপাশের মানুষগুলো কত সযতনে মনের ভেতর পুষে রাখে বিকৃত যৌনলিপ্সা।
তাই আবার মেয়েদেরই বলছি, সত্যটা বুঝে নাও সহজ করে। এই ধর্ম তোমার নয়, দেশ তোমার নয়, সমাজ তোমার নয়, ঘর তোমার নয়, বাহিরও তোমার নয়। এমনকি তোমার সন্তানও তোমার নয়। তুমি এক জন্ম যাযাবর বা উদ্বাস্তু।
তোমাকে সবাই পরকালের ভয় দেখাবে, আর ইহকালের ছিনিয়ে নেবে সব। তোমার ভাষা, তোমার সম্পদ, তোমার স্বপ্ন, তোমার শরীর.. সব। যদিও পরকালেও তুমি সেবাদাসীই হবে!!
-উইমেনচ্যাপ্টার থেকে
পাঠকের মতামত: